সম্পাদকীয়

            কালোত্তীর্ণ লেখা মানেই তা যেমন সময়, কাল ও অবস্হার ধার ধারে না তেমন ধার ধারে না ধার করা ধ্যান ধারণাকে শব্দের ভিন্নরূপ দ্বারা তার নয়াবর্তন; ঠিক সেই রকমই বাংলা নাট্যের কালোত্তীর্ণ ক্ষণজন্মা এক ধ্যানী পুরুষ নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন। শুরুর দিকে কবিতা, গল্প, দেশী-বিদেশি সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ, রেডিও ও টেলিভিশন নাটক দিয়ে লেখনী শুরু হলেও ক্রমে তাঁর লেখন ভুখণ্ড হয়ে দাঁড়ায় মঞ্চনাট্য যার ফলে বাঙ্গালীর প্রাচীন নাট্য ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় সৃজিত হয় বাংলা রঙ্গমঞ্চের নতুন এক রীতি – ‘আধুনিক বাংলা বর্ণনাত্মক নাট্য’। ‘থেসপিয়ানে’র প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে ‘আধুনিক বাংলা বর্ণনাত্মক নাট্য’ রীতির সফল মঞ্চরূপকার বাংলা নাট্যের সুবর্ণপুত্র নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর ঐকান্তিক ইচ্ছায় ও লিখিত অনুমতি প্রদানে সেলিম আল দীন কৃত সকল রচনার মূল বাংলা ও অনূদিত ইংরেজী ভাষায় ক্রম প্রকাশে (ইলেক্ট্রনিক) নিজেদের যুক্ত করতে পারায় আমরা অত্যন্ত উল্লসিত ও আপ্লুত যা বিশ্ব নাট্যশিল্পের ইতিহাসে কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে।

            অখণ্ড ভারতবর্ষের ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনে বাংলা নাটক হারিয়েছে তার রূপ, রস, গন্ধ, বর্ণ – আপন অঙ্গে ধারন করেছে বিলাতি ঠাঁট; বিচ্ছিন্ন করেছে নিজেকে নিজের গণ্ডী থেকে। রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে বাংলা নাট্যের আঙ্গিকে আবার নতুনরূপে আগত বঙ্গীয় শিথিলতায় পরিতৃপ্ত হয় বাংলা নাট্যের চিরন্তন সুর। তাঁর গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য এবং ১৯০৭ পরবর্তী রচিত তাঁর পূর্ণাঙ্গ নাট্য রচনার পরম্পরায় বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ৭০-এর দশকে এসে সেলিম আল দীনের পরিচর্যায় পূর্ণ প্রাণপ্রাচুর্য্যে প্রকাশিত হয় বাংলার আধুনিক নাট্যশৈলী যেটি তার আদিরূপ, রস, গন্ধ, বর্ণ মিশ্রিত এক অনন্য নাট্যকাব্য যা বাঙ্গালীর একান্ত নিজস্ব।

            আজকের এই প্রয়াস বিশ্বনাট্যের সকল গৌরবের পাশে ‘বাংলা নাট্য’ যদি তার সঠিক পরিচয়ে নিজের স্হান করে নেয় তবেই আমাদের শ্রম সার্থক হবে। আমরা সীমাবদ্ধ নই, তারপরেও নানানভাবে সীমাবদ্ধ। সেই সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় আমাদের সকলের। তার তাই, বিশ্বের সকল শুভানুধ্যায়ী শিল্পপ্রেমী মানুষদের ঐকান্তিক সহযোগীতা আমাদের একান্ত কাম্য।

            জয় হোক সাম্যের, জয় হোক মানবতার।