সারসংক্ষেপ:

            বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল তথা খুলনাঞ্চলের লোকসংস্কৃতি ছিল ঐতিহ্যপূর্ণ। ১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাসে লোকসংগীতবিদ ড. উনিয়াসের নেতৃত্বে খুলনাঞ্চল থেকে সংগৃহিত তিনটি গান ‘এশিয়া প্যাসিফিক লোকসংগীত’ অডিও ক্যাসেটে ‘বাংলাদেশের লোকসংগীত’ পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ‘এশিয়ান কালচার সেন্টার ফর ইউনেস্কো’-র লোকসংগীত বিশেষজ্ঞগণ এই গানের ভূয়শী প্রশংসা করেন। এখানকার লোকসংগীতের কথা, সুর, তাল, ভাব, ভাষা, ভঙ্গি ও বিষয় একেবারেই স্বতন্ত্র। এখানকার তেমনই এক জনপ্রিয় লোকসংগীত ‘ভাঁটিপূজার গান’। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, ভাঁটিপূজার মাধ্যমে বসন্ত রোগ বা পক্স (Pox/chicken pox/small pox) প্রতিহত করা যায়। এলাকার ছোট ছোট মেয়েরা তাই এই মেয়েলীগীত গায়। এ গান মানুষের কথা বলে, মানবতার কথা বলে।

            সমূদ্র নিকটবর্তী নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ, সংখ্যালঘু তথা হিন্দুদের প্রতি অত্যাচার, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ভৌগলিক সহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত খুলনাঞ্চলের লোকসংস্কৃতি বর্তমানে হুমকির মুখে। মানুষের হাতে হাতে মোবাইল/নেট কাছে এনে দিয়েছে সমস্ত বিশ্বের বিনোদনকে, যার কারণে মাঝি আর নৌকায় উদাত্ত কণ্ঠে ভাটিয়ালী গায় না, ছেলেমেয়েরা আর মাঠে গিয়ে হাডুডু/গোল্লাছুট খেলতে উৎসাহ দেখায় না। সরকারের সাথে সাথে রয়েছে সাধারণ মানুষেরও লোকসংস্কৃতির প্রতি উদাসীনতা। কিন্তু একটি জাতি বিশ্বের দরবারে তখনি মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, যখন সে নিজের সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করে। ভাঁটিপূজার গানের মত বিভিন্ন অঞ্চলের লোকসংগীত পুনঃচর্চা ও পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে সমাজ তার সংস্কৃতিকে নতুন করে চিনতে শিখবে। ভালবাসতে শিখবে।